- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
শরীরের ফ্যাট পার্সেন্টেজ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যারা ফিটনেস সচেতন বা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন। এটি আমাদের জানায় যে, শরীরের মোট ওজনের কত শতাংশ ফ্যাট দ্বারা গঠিত। শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ। তাই শরীরের ফ্যাট পার্সেন্টেজ বুঝে সঠিক পরিকল্পনা করা দরকার।
এই ব্লগে আমরা শরীরের ফ্যাট গণনা করার বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
শরীরের ফ্যাট নির্ণয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
শরীরের ফ্যাট নির্ণয় করার জন্য কিছু মূল উপাদান বিবেচনা করা হয়, যেমন:
উচ্চতা (Height): উচ্চতার তুলনায় ওজন বেশি হলে ফ্যাট পার্সেন্টেজও বেশি হতে পারে।
ওজন (Weight): শরীরের মোট ওজনের মধ্যে কী পরিমাণ ফ্যাট রয়েছে, তা জানার জন্য ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
বয়স (Age): বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফ্যাট পার্সেন্টেজ স্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে।
লিঙ্গ (Gender): সাধারণত মহিলাদের শরীরে পুরুষদের তুলনায় বেশি ফ্যাট থাকে।
শারীরিক গঠন ও পেশী (Body Composition & Muscle Mass): পেশীর পরিমাণ বেশি থাকলে ফ্যাট কম থাকে।
শরীরের ফ্যাট গণনার জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলো
শরীরের ফ্যাট গণনা করার বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ও কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো:
১. বিএমআই (BMI) পদ্ধতি
বডি মাস ইনডেক্স (BMI) হলো একটি সহজ পদ্ধতি যা উচ্চতা ও ওজনের অনুপাত দিয়ে ফ্যাট লেভেল নির্ধারণ করে।
BMI নির্ণয়ের সূত্র:
BMI = \frac{\text{ওজন (kg)}}{\text{উচ্চতা (m)}^2}
উদাহরণস্বরূপ, কারও ওজন ৭০ কেজি এবং উচ্চতা ১.৭৫ মিটার হলে, তার BMI হবে:
BMI = \frac{70}{1.75^2} = 22.86
BMI স্কেল:
১৮.৫-এর নিচে = ওজন কম
১৮.৫ - ২৪.৯ = স্বাভাবিক ওজন
২৫ - ২৯.৯ = অতিরিক্ত ওজন
৩০-এর বেশি = স্থূলতা
তবে, BMI শরীরের ফ্যাটের নির্ভুল হিসাব দেয় না, কারণ এটি পেশী ও ফ্যাটকে আলাদা করে বিবেচনা করে না।
২. বডি ফ্যাট ক্যালিপার পদ্ধতি (Skinfold Measurement)
এই পদ্ধতিতে ক্যালিপার নামক একটি ডিভাইস ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে চর্বির স্তর পরিমাপ করা হয়। সাধারণত নিম্নলিখিত অংশগুলোর চর্বি মাপা হয়:
পেট (Abdomen)
বাইসেপস (Biceps)
উরু (Thigh)
পিঠের নিচের অংশ (Lower back)
এরপর নির্দিষ্ট সূত্র অনুযায়ী ফ্যাট পার্সেন্টেজ বের করা হয়।
৩. ওয়েস্ট-হিপ রেশিও (WHR) পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে কোমর ও নিতম্বের মাপ নিয়ে শরীরের ফ্যাট বিতরণ নির্ণয় করা হয়।
WHR নির্ণয়ের সূত্র:
WHR = \frac{\text{কোমরের মাপ (ইঞ্চিতে)}}{\text{নিতম্বের মাপ (ইঞ্চিতে)}}
স্বাস্থ্যকর WHR রেঞ্জ:
পুরুষদের জন্য: ০.৯ বা এর কম
মহিলাদের জন্য: ০.৮ বা এর কম
WHR বেশি হলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৪. বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল ইম্পিডেন্স অ্যানালাইসিস (BIA) পদ্ধতি
এটি একটি আধুনিক পদ্ধতি যেখানে শরীরের মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহ পাঠিয়ে ফ্যাট পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত স্মার্ট ওয়েট স্কেল বা জিমের বিশেষ মেশিনের মাধ্যমে এটি পরিমাপ করা হয়।
৫. ডুয়াল-এনার্জি এক্স-রে অ্যাবসর্পটিওমেট্রি (DEXA Scan)
এটি অত্যাধুনিক ও নির্ভুল পদ্ধতি, যেখানে এক্স-রে ব্যবহার করে শরীরের চর্বি, পেশী ও হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয় করা হয়।
অনলাইন বডি ফ্যাট ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা
আপনি চাইলে অনলাইনে সহজেই বডি ফ্যাট ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে ফ্যাট পার্সেন্টেজ নির্ণয় করতে পারেন। কিছু জনপ্রিয় ওয়েবসাইট:
Calculator.net
BodyBuilding.com
Healthline
বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজের আদর্শ রেঞ্জ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী ফ্যাট পার্সেন্টেজের আদর্শ রেঞ্জ নিম্নরূপ:
যদি কারও ফ্যাট পার্সেন্টেজ এই রেঞ্জের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে এটি ওজন কমানো বা ফিটনেস বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
ফ্যাট কমানোর উপায়
যদি আপনার বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ বেশি থাকে, তবে এটি কমানোর জন্য কিছু কার্যকরী উপায় রয়েছে:
সঠিক ডায়েট অনুসরণ করুন – প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান, চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।
ব্যায়াম করুন – কার্ডিও ও ওজন প্রশিক্ষণ শরীরের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন – শরীর ডিটক্স করতে ও বিপাকক্রিয়া বাড়াতে পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন – ঘুম কম হলে মেটাবলিজম কমে যায়, যা ফ্যাট বাড়ায়।
স্ট্রেস কমান – অতিরিক্ত মানসিক চাপ কোর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে ফ্যাট স্টোরেজ বাড়াতে পারে।
শেষ কথা
শরীরের ফ্যাট পার্সেন্টেজ জানা আমাদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়। উপরের পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটি অনুসরণ করে আপনি সহজেই আপনার বডি ফ্যাট নির্ণয় করতে পারেন। যদি এটি বেশি হয়, তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করে ধীরে ধীরে তা কমানোর চেষ্টা করুন।
আপনার বডি ফ্যাট সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হলে, একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি ব্যবহার করে এটি পরীক্ষা করুন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন